মনোনয়ন পাচ্ছেন না একাধিকবার চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা

সৈয়দুল কাদের •

গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, একাধিকবার চেয়ারম্যান, পরিবারের একে সদস্য বিভিন্ন দলের সাথে জড়িত, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, মাদক ব্যবসায় জড়িত, মাদক সেবনকারীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। কৌশলে তালিকাভুক্ত হলেও তা অভিযোগের ভিত্তিতে বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় মনোনয়ন বোর্ড।

তাই চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সদস্য ডঃ আবদুর রাজ্জাক। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ মনোনয়ন প্রত্যাশী।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও ইউপি নির্বাচনে তারা মনোনয়ন চাইলেও বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধুমাত্র ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য নৌকা প্রতীক পেতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বিতর্কিতরা।

পরিবারের একেক সদস্য একেক দলের রাজনীতিতে জড়িত। এসব সুবিধাবাধীদের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছেন তৃণমুলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। চকরিয়ার বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন টিটু জানিয়েছেন, শীর্ষনেতাদের লাইনে না থাকলে মনোনয়ন পাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না।

এসময় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইন্ধন যোগীয়ে হারিয়ে দেওয়া হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। সদস্য সমাপ্ত কক্সবাজারের ১৪ ইউপি নির্বাচনে এটি দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে একই ব্যক্তি দলের মনোনয়নে চেয়ারম্যান হবেন তা কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে দলের মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য একাধীক নেতা। যারা মনোনয়ন চাইলেও বঞ্চিত হন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ত্যাগী নেতাকর্মীদের জন্য সুখবর।

তিনি নেতাকর্মীদের ভালবাসেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক চকিরয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষনেতা জানান, গত নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নেই দলের মনোনীত প্রার্থীদের পরাজিত করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইন্ধন দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদেরও জয়ী করতে কাজ করেছেন কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা। পৌর নির্বাচনেও একই অবস্থা হয়েছে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনেও একই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সদ্য জামায়াত থেকে আসা লোকও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এতে দলের ক্ষতি হলেও কতিপয় নেতা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। এবার কেন্দ্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নজরে আনায় আমরা খুশী হয়েছি। এবার হয়তোবা ত্যাগীদের মুল্যায়ন হবে।

কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, দলের মনোনয়ন একাধীকাবার একই ব্যক্তিকে দেওয়া কাম্য নয়। দুইবারের অধিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যানের নেৃতত্বে পৃথক বলয় সৃস্টি হয়। যা রাজনীতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। এছাড়া তৃণমুলের নেতাকর্মীদের আর মুল্যায়ন হয় না। নেতৃত্বের প্রসার ঘটাতে ত্যাগীদেরই মুল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া চেয়ারম্যানের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। যা প্রকাশ্যে এসেছে।

চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্ধ প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডঃ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে এতে প্রার্থীদের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই চুড়ান্ত করবেন সবকিছু।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডঃ আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন দলের মনোনয়নে যাতে বিতর্কিত কেউ না আসে তা যাচাই করতে তালিকা প্রকাশের সময় বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে যাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এতে কেউ বিতর্কিত থাকলে তিনি তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা কয়েক দফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মনোনয়নের আশা ক্ষিণ। এছাড়া দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবে না।